আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের অন্যায্য নীতির বিরুদ্ধে বৈশ্বিক কর্মসপ্তাহের (GWOA) অংশ হিসেবে জামালপুরে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের অন্যায্য নীতির বিরুদ্ধে ১৩–১৮ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত পালিত হচ্ছে বৈশ্বিক কর্মসপ্তাহ (Global Week of Action- GWOA)। এই বৈশ্বিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক নাগরিক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর উদ্যোগে বাংলাদেশেও নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ১৫ অক্টোবর ২০২৫, জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইয়াসিনপাড়ায় অনুষ্ঠিত হলো “খাদ্য, পানি ও জমিতে নারীর অধিকার রক্ষার দাবিতে” এক গুরুত্বপূর্ণ নারী সমাবেশ।
সমাবেশের লক্ষ্য ছিল জলবায়ু পরিবর্তন, ঋণের বোঝা ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রভাবে নারীরা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, সেই বাস্তবতা তুলে ধরে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং কীভাবে তারা সমাধানের অংশ হতে পারেন, তা তুলে ধরা।
সভাপতিত্ব করেন মাহাবুবুর রহমান মহব্বত, প্রাক্তন চেয়ারম্যান দিকপাইত ইউনিয়ন পরিষদ, জামালপুর।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মোহাম্মদ এনামুল হক, প্রধান নির্বাহী, এসপিকে ও সমন্বয়ক ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট শাহ মোহাম্মদ ওয়ারেছ আলী মামুন, প্রাক্তন মেয়র, জামালপুর পৌরসভা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কেন্দ্রীয় বিএনপি ও সাধারণ সম্পাদক, জামালপুর জেলা বিএনপি।
বিশেষ অতিথিবৃন্দ:
মোঃ রুহুল আমিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক, জামালপুর সদর উপজেলা বিএনপি।
ছাইদা বেগম শ্যামা, সাধারণ সম্পাদক, জামালপুর জেলা মহিলা দল। জনাব শামীমা বেগম রুবি, প্রাক্তন কাউন্সিলর, জামালপুর পৌরসভা।
মোঃ মশিউল আলম বাবলু, কলামিস্ট ও গবেষক।
এম,এইচ, মজনু মোল্লা, চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবতা ফোরাম।
মোঃ মনিরুজ্জামান খান, অধ্যক্ষ, জামালপুর হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল।
আমির উদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
আলোচ্য বিষয় ও দাবিদাওয়া:
সমাবেশে বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তন, ঋণ ও বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরেন:
১. খাদ্য, পানি ও জমিতে নারীর অধিকারের গুরুত্ব:
বক্তারা জোর দিয়ে বলেন যে, নারীর অর্থনৈতিক ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য খাদ্য, পানি ও কৃষি জমিতে তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। জলবায়ু সংকটের মুখে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত হলে তারা এই সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।
২. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নারীর জীবন ও জীবিকায় সৃষ্ট সংকট:
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা, বন্যা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি—এসবের ফলে নারীদের জীবন-জীবিকা চরম সংকটে পড়ছে। খাদ্য ও পানির অভাব, বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ এবং স্বাস্থ্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব বিশেষভাবে নারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
৩. ঋণ ও বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত দাবি:
বক্তারা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণনীতি এবং কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচির সমালোচনা করে বলেন যে, এই নীতিগুলো সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়াচ্ছে এবং নারীসহ তৃণমূলের মানুষকে আরও দুর্বল করে তুলছে। তারা ঋণনীতিতে ন্যায্যতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
৪. গ্লোবাল নর্থের দায় স্বীকার ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ:
বক্তারা বলেন, জলবায়ু সংকটের জন্য ঐতিহাসিকভাবে গ্লোবাল নর্থ বা উন্নত দেশগুলোই মূলত দায়ী। এই বৈশ্বিক ক্ষতির জন্য তাদের দায় স্বীকার করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে, বিশেষ করে বাংলাদেশে জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শাহ্ মোহাম্মদ ওয়ারেছ আলী মামুন তার বক্তব্যে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং তৃণমূলের এই আন্দোলনকে সমর্থন জানান।
সমাপনী:
সমাবেশ থেকে নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয় যেন তারা নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে এবং অর্থনৈতিক ও জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) তাদের এই আন্দোলনকে আগামী দিনেও তৃণমূল পর্যায়ে জোরদার করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।







