আজ ১১ জুলাই ২০২৪, বৃহষ্পতিবার, বিকাল ৩:০০ টায় সিলেট মহানগরীতে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), জালালাবাদ এসোসিয়েশন এবং সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর যৌথ আয়োজনে “সিলেটের বন্যা ও জলাবদ্ধতাঃ বাস্তবতা, কারণ ও করণীয়” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব শরীফ জামিল।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল করিম কিম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জালালাবাদ এসোসিয়েশন এর সভাপতি সিএম কয়েস সামি। এই গোলটেবিলে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস; লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর কাজী আজিজুল মওলা, পিএইচডি; সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর প্রফেসর ড. মো: আশরাফুল আলম; মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি সিলেট এর উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক এবং সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি তাহমিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার; সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী আকবর; বেসরকারী উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইডিয়া’র নির্বাহী-পরিচালক নাজমুল হক; সিলেট মিরর এর সম্পাদক আহমেদ নূর, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যাপক ড. বিজিত কুমার বণিক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যাপক ড. আহমেদ হাসান নুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়র স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কৌশিক সাহা, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক; দ্য ডেইলি স্টার এর সিলেট প্রতিনিধি দ্বোহা চৌধুরী; বাঁচাও বাসিয়া ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফজল খান; পুষ্পায়ন সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী এবং আরিফা সুলতানা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, সিলেটের বন্যার জন্য প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং জনগণ দায়ী। বাংলাদেশের সকল আইন নদী, পানি এবং পরিবেশের পক্ষে। আমাদের উচিত মানুষের কাছে যাওয়া এবং সংকট মোকাবেলায় তাদেরকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আজকের পরিবেশ সংকটের মূলে রয়েছে দুর্নীতি, দুর্নীতি এবং দুর্নীতি। ব্যাপক ও সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। আমরা বিক্ষিপ্তভাবে মতামত দিতে পারি কিন্তু কাজ করবে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ। আজকের পরিবেশ সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা উচিত। নদী, পানি, পরিবেশ নিয়ে প্রশাসনের যে সকল ব্যক্তি কাজ করবেন তাদেরকে জনগণের নজরদারি করতে হবে।
সভাপতির আলোচনায় সিএম কয়েস সামি বলেন, সিলেটের সকল পক্ষকে নিয়ে সমস্যা চিহ্নিত করবো এবং দায়িত্বশীলদের কাছে তা উত্থাপন করে বাস্তবায়ন করতে বলবো। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে সরকার তা করতে বাধ্য।
প্রধান আলোচক শরীফ জামিল বলেন, সিলেটে যুগ যুগ ধরে যে বন্যা হয় তা হতে দিতে হবে জমি গঠন ও উর্বরতার জন্য। এখন যা হচ্ছে তা আসলে বন্যা নয়, জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতার জন্য যারা দায়ী তাদেরকে দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা যাবেনা। সিলেটের বন্যা এবং জলাবদ্ধতার কারণ জানতে বিজ্ঞান জানার প্রয়োজন হয় না। উন্নয়নের জন্য সিলেটের জলাধারগুলো ভরাট করা হয়েছে। নীতি নির্ধারকদেরকে সিলেটের বন্যা এবং জলাবদ্ধতাকে অবশ্যই সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে। উন্নয়ন স্বল্প কিংবা দীর্ঘমেয়াদী যাই হোক না কেন তার পরিকল্পনার সাথে সিলেটের স্থানীয় মানুষ এবং বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে।
অধ্যাপক ড. মো: ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, সিলেটের দুইটি এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। তার মধ্যে একটি হলো শাহজালাল উপশহর আরেকটি হলো সুরমা আবাসিক এলাকা। এই দুইটি এলাকাই জলাভূমি ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে।
অধ্যাপক কাজী আজিজুল মওলা, পিএইচডি বলেন, উন্নয়ন কাজের মধ্যে কোন সমন্বয় থাকে না। আমাদেরকে অবশ্যই পেছনে ফিরে দেখতে হবে আমরা কি হারিয়েছি আর তার উপরে ভিত্তি করেই আমাদের কাজ করতে হবে।
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড মো আশরাফুল আলম বলেন, শুধু প্রকল্পের জন্য প্রকল্প নয়, বাস্তব কল্যানকর প্রকল্প গ্রহন করতে হবে এবং সেটার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি সিলেট এর উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে হাইকোর্ট নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ দূষণ আর দখলের মাধ্যমে আমরা নদীকে মেরে ফেলছি। সিলেটের বন্যা জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পেতে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা এবং সুশাসন থাকতে হবে। প্লাবণভূমিতে নির্মিত স্থাপনা অপসারণ করা এখন সময়ের দাবি। দীর্ঘদিন লন্ডনের অবস্থান করা মেয়রকে টেমসের অভিজ্ঞতা নিয়ে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বয়ে যাওয়া সুরমা নদী ব্যবস্থাপনা করতে হবে। দীঘি, পুকুর, ছড়াগুলোকে উদ্ধার করতে হবে।
তাহমিন আহমেদ বলেন, আমরা সিলেটবাসী আসলে নির্যাতিত। আমাদের কথা কেউ শুনে না। মানবসৃষ্ট দুর্যোগ আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করেছি। নদী থেকে পাথর উত্তোলন করে নদীকে ধ্বংস করা হচ্ছে। জনগণেকে শেখাতে হবে পরিবেশ যাতে ধ্বংস না হয় আর এর দায়িত্ব সরকারের।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে আরো উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডীন প্রফেসর ড. কামাল আহমদ চৌধুরী, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্ট্রের সভাপতি মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসিনা বেগম চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সাবেক সহ সভাপতি এজাজ আহমেদ চৌধূরী, বাংলাদেশ এনভায়রমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন)-এর নিউইয়র্ক শাখার সদস্য শাহানা বেগম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জফির সেতু, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. ফারুক উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ, সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল হাই আল হাদী, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা এর সভাপতি কাসমির রেজা, বাঁচাও হাওর আন্দোলনের আহ্বায়ক সাজিদুর রহমান সোহেল, আনন্দ নিকেতন স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক রিপন চন্দ্র সরকার প্রমূখ।