১৬ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার বাংলামোটরে বিআইপি সম্মেলন কক্ষে ৩১টি সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনের আয়োজনে হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ ধ্বংস করে এফডিসি থেকে পর্যন্ত প্রকৃতি বিধ্বংসী ও জনবিরোধী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সংযোগ সড়ক বাতিলের দাবিতে নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
নাগরিক সংলাপে আলোচকবৃন্দ বলেন, জনগণের মতামত উপেক্ষা করে কোনও প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তা টেকসই উন্নয়নের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কয়েকজনের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের জন্য পান্থকুঞ্জের মতো পার্ক উজাড় করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার বাংলামোটরে বিআইপি সম্মেলন কক্ষে ৩১টি সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনের আয়োজনে এক নাগরিক সংলাপে আলোচকরা এসব কথা বলেন।
সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা) উপদেষ্টা মুজিবুল হক হাওলাদার বলেন, ‘ইতোমধ্যে অনেক প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। সেগুলোর মতো এই প্রকল্পও আগামী এক সাপ্তাহের মধ্যে বাতিল করা হবে বলে আমরা আশা করি।’ তিনি বলেন, ‘যদি এখান থেকে উত্থাপিত দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তবে সচিবালয় পর্যন্ত যাওয়া হবে।’
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে সবুজ এলাকা ও জলাধার কমে যাওয়ায় নগরজীবন ইতোমধ্যেই হুমকির মুখে। এই প্রকল্প পরিবেশগত ভারসাম্য আরও নষ্ট করবে।’ এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে যথাযথ পরিবেশ সমীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণের মতামত উপেক্ষা করে কোনও প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তা টেকসই উন্নয়নের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রকল্পগুলো পরিবেশবান্ধব হিসেবে বাস্তবায়ন করা উচিত। হাতিরঝিল এবং পান্থকুঞ্জ পার্কের মতো এলাকার পরিবেশগত গুরুত্ব বিবেচনা না করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক নির্মাণ একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।’
ব্লু প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভ (বিপিআই)-এর মুখপাত্র পরিবেশকর্মী শরীফ জামিল বলেন, ‘কয়েকজনের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের জন্য পান্থকুঞ্জের মতো জায়গা উজাড় করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’ বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের কর্মসূচির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোনও পরিবেশবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে ৩৫ দিন অবস্থান করতে হয়নি। এমনকি কোনও ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়েও তা হয়নি। এ রকম বিকারহীন সমাজ ব্যবস্থা হতে পারে না।’
গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজীব বলেন, ‘এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন জন উপদেষ্টা তাদের সঙ্গে বসার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘পার্ক রক্ষার আন্দোলন করার কথা ছিল না। যদি জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে বিগত সরকারের মতো পদদলিত করা হয়, তাহলে গণঅভ্যুত্থানে এত আত্মাহুতি কেন দেওয়া হয়েছিল?’
তিনি আরো বলেন, ‘পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর ফাইভ স্টার হোটেলে সভা বন্ধ করতে হবে। দেশের পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সংলাপে ঢাকা শহরের পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় গণপরিবহনকেন্দ্রিক প্রকল্প গ্রহণে জোর দেওয়া হয়। বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক শায়ের গফুর ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বিশেষ সম্পাদক পারভীন ইসলামসহ অন্যরা এতে বক্তব্য রাখেন।
রাজধানীর হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংস করে এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করা না হলে সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানানো হয় সংলাপ থেকে।
সভা শেষে সংগঠনগুলোর নেতারা পান্থকুঞ্জ পার্ক পরিদর্শন এবং অবস্থানরত বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
