আজ ৩রা জানুয়ারি ২০২৫, পান্থকুঞ্জ পার্ক থেকে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষার আন্দোলনের ওপর সংঘবদ্ধ হামলার বিরুদ্ধে ও ন্যায়বিচারের দাবিতে পান্থকুঞ্জ প্রভাতী সংঘ ও বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন এর যৌথ আয়োজনে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে পরিবেশকর্মীসহ নানা স্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে সঞ্চালনা করেন মূখপাত্র প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য ইবনুল সাইদ রানা।

প্রতিবাদ সমাবেশে ইবনুল সাইদ রানা বলেন “একটা ন্যক্কারজনক ঘটনার সাক্ষী হলাম আমরা। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে যে সংগঠন পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন সেই বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদার, সহ-সভাপতি মহিদুল হক খান,  বেন সমন্বয়ক খালেকুজ্জামান উপস্থিতিতে বাপার সাধারন সম্পাদক আলম কবির তাদেরই সহযোগী আরেক সংগঠন গ্রীন ভয়েসের কর্মী দিয়ে আজকে গাছ রক্ষার আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করলেন। আপনারা তাহলে কি পরিবেশ রক্ষার জন্য কাজ করেন নাকি অন্য কারও ব্যবসায়িক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন। আমরা চাই যারা এই ন্যাক্কারজনক কাজের সাথে যুক্ত তাদের শাস্তি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।

ধরিত্রী রক্কায় আমরা (ধরা) এর সদস্য মামুন কবীর বলেন যারা মানুষ পেটাতে পারে তাদের জন্য গাছ কাটা কোন বড় ব্যাপার না। আমরা এই কংক্রিটের নগরী চাই না। আমরা প্রাণ প্রকৃতির সবুজে ঘেরা শহর চাই। যারা পান্থকুঞ্জ গাছ রক্ষার আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিনুর রাজিব বলেন আমরা গত ২২ দিন ধরে এখানে অবস্থান করছি যাতে পান্থকঞ্জের একটা গাছও যেন না কাটা হয়। কিন্তু একটা স্বার্থন্বাশি মহল তাদের স্বার্থের জন্য ইকবাল হাবিবের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের উপর হামলা করল। আমরা এর সুষ্ট তদন্ত দাবি জানাচ্ছি।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মিজানুর রহমান, গাছ রক্ষা আন্দোলনের সহসমন্বয়ক রাকিব, বৃক্ষ প্রেমিক মো আব্দুল ওয়াহিদ সরকারসহ অনেকেই।

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

পান্থকুঞ্জ পার্কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অবৈধ র‍্যাম্প নির্মাণের প্রতিবাদে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা টানা ২২ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে চলেছেন। শীতের বৈরী আবহাওয়া, ঘন কুয়াশা এবং ক্রমবর্ধমান দূষণের মধ্যেও তাদের অটুট দৃঢ়তা প্রশংসনীয়।

১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে, আন্দোলনের কর্মীরা গুলশান শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মাঠ উন্মুক্ত করার দাবিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেন। এটি শহরের উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণের লড়াইয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।

আনোয়ারা উদ্যানের অগ্রগতি

২২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে, তেজগাঁও কলেজের উল্টো দিক থেকে খামারবাড়ি পর্যন্ত আনোয়ারা উদ্যানের ভিতর দিয়ে চলমান একটি বিতর্কিত রাস্তার নির্মাণকাজ বন্ধ করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনজন উপদেষ্টা আনোয়ারা পার্ক পরিদর্শন করেন। তাদের হস্তক্ষেপে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়:

১. আনোয়ারা উদ্যানের ভেতরে অবৈধ রাস্তা নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ করা। ২. উদ্যান থেকে মেট্রোরেলের যাবতীয় যন্ত্রপাতি ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে অপসারণ। ৩. ২৬ মার্চ ২০২৫ তারিখে আনোয়ারা উদ্যান সম্পূর্ণভাবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা।

আন্দোলনকারীরা এই সিদ্ধান্তকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করলেও, সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়ে তারা এখনও সতর্ক রয়েছেন।