আজ ৯ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার সকাল ১১:০০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ধরা, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, মার্কেট ফোর্সেস এবং ফসিল ফ্রি চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জন্য ৫০ বিলিয়ন ডলারের এলএনজি প্রকল্পের ব্যয় ও একটি টেকসই ভবিষ্যৎ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ধরা’র উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার এর সভাপতিত্বে এবং ধরা’র সদস্য সচিব শরীফ জামিল এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন মার্কেট ফোর্সেসের এশিয়া অ্যানার্জি অ্যানালিস্ট মুনিরা চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, ইন্সটিটিউট ফর এনার্জি ইকোনোমিকস অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল অ্যানালাইসিস এর এনার্জি ফর বাংলাদেশের লিড অ্যানালিস্ট শফিকুল আলম, মার্কেট ফোর্সেস’র এশিয়া এনার্জি ফাইন্যান্স ক্যাম্পেইনার মেগু ফুকুজাওয়া এবং থ্রিফিফটি ডট ওআরজি (350.org) সাউথ এশিয়ার মোবিলাইজেশন কো-অর্ডিনেটর আমানুল্লাহ পরাগ প্রমূখ।
মার্কেট ফোর্সেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এবং ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) কর্তৃক প্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে নতুন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) প্রকল্প এবং আমদানি টার্মিনালগুলির জন্য বাংলাদেশকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে। এই প্রকল্পগুলোর কারণে দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে, একই সাথে দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যেমন বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হবে।
বর্তমানে, বাংলাদেশের জনগণ বিদ্যুৎ খরচের চাপে রয়েছে, এবং ব্যয়বহুল আমদানি করা এলএনজি’র ওপর নির্ভরতা অব্যাহত থাকলে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। নতুন বিশ্লেষণে আরো প্রকাশিত হয়েছে যে, যখন দেশটি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্কটে রয়েছে, এলএনজির উপর ৫০ বিলিয়ন ডলারের এ বিনিয়োগের পরিবর্তে বাংলাদেশ ৬২ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, যা দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দ্বিগুণ।
‘ব্যয়বহুল এলএনজি সম্প্রসারণ’ শিরোনামে এই নতুন প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের জিই ভার্নোভা ও জাপানের জেরার মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে এলএনজি প্রকল্প সম্প্রসারণে আগ্রহী, যা দেশটির পরিবেশ ও স্থানীয় জনগণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে। জাপানের সরকারি সংস্থা জাইকা এবং এনার্জি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অফ এনার্জি ইকোনমিক্স জাপান (আইইইজে) বাংলাদেশে আমদানিনির্ভর ও এলএনজি-কেন্দ্রিক শক্তির মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে যে, প্রস্তাবিত ৪১টি নতুন গ্যাস চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন হবে, যা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাগুলোর প্রকোপ বৃদ্ধি করবে এবং বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম খারাপ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাবে।
মূল তথ্য:
● গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে মোট ৩৭.৪ গিগাওয়াট ক্ষমতার ৪১টি নতুন এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যা দেশের বিদ্যমান বিদ্যুৎ বহরের চেয়ে বেশি।
● এই প্রকল্পগুলোকে সমর্থনের জন্য সাতটি নতুন এলএনজি আমদানি সুবিধার প্রস্তাব করা হয়েছে।
● নতুন বিশ্লেষণ অনুসারে, প্রস্তাবিত এলএনজি প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে, এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ডলার এবং আমদানি সুবিধার জন্য ১৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে।
● ২০৪১ সাল নাগাদ, বাংলাদেশকে এলএনজি আমদানির কারণে বছরে প্রায় ৭-১১ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হবে, যা বর্তমান জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির খরচের প্রায় দুই থেকে তিনগুণ।
● চট্টগ্রামে পরিকল্পিত এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তাদের কার্যকালীন সময়ে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড সমতুল্য (CO₂-e) নির্গমন করবে, যা বাংলাদেশের বর্তমান বার্ষিক নির্গমনের প্রায় ছয়গুণ।
● গ্যাসের এই উন্নয়ন ও সংশ্লিষ্ট পরিবেশগত চাপ কমপক্ষে ২৬টি বিপন্ন প্রজাতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। এদের মধ্যে এশিয়ান হাতি, ক্লাউডেড লেপার্ড এবং আঁশযুক্ত অ্যান্টিয়েটার নামে পরিচিত চাইনিজ প্যাঙ্গোলিন অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো স্থানীয় বনের ওপর নির্ভরশীল।
● গ্যাস প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় স্থানীয় জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা রয়েছে। কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলে লাখ লাখ পরিবার পর্যটন, মৎস্য, শুকনো মাছ, লবণ উৎপাদন, পান চাষ, এবং কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলো দূষণকারী কার্বন-নিবিড় প্রকল্পের হুমকিতে রয়েছে।
● এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রয়োজনীয় ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ না করে, বাংলাদেশ ৬২ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে পারে, যা বিদ্যমান গ্যাস বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে প্রতিস্থাপন করতে বা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের চারগুণের সমান পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। বাংলাদেশে প্রায় ২৪০ গিগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ এবং ৩০ গিগাওয়াট উপকূলীয় বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
● বাংলাদেশের এলএনজি-নির্ভর ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যানটি জাপানি সরকারি সংস্থা জাইকা ও ইনস্টিটিউট অফ এনার্জি ইকোনমিক্স, জাপান (আইইইজে) কর্তৃক প্রণীত। জাপানি কোম্পানিগুলো দেশের পরিকল্পিত এলএনজি প্রকল্পগুলোর অর্ধেকেরও বেশি অংশে বিদেশী অংশীদার হিসেবে যুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোও এ খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
Source:
- prothomalo
- newagebd
- khaborerkagoj
- thefinancialexpress
- dhakatribune
- tbsnews
- thedailystar
- bdnews24
- salomemanzo
- banglatribune
- deshrupantor
- dailynayadiganta
- ajkerpatrika
- bdnews24
- dhakapost
- jugantor
- unb
- dw
- kalerkantho
- sangbad
- shomoyeralo
- cpd
- bonikbarta
- kalbela
- jugantor
- dainikamadershomoy
- m.priyo
- khaborerkagoj
- youtube
- youtube
- thefinancialexpress
- youtube
- youtube