জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের বৈষম্য নিরসন ও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ আন্দোলন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, ওই অঞ্চলের সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার মান আরো নাজুক হবে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন তারা।

উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ এবং ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল।আলোচনায় অংশ নেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’র সদস্যসচিব শরীফ জামিল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রসুল, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ ও কল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সংগঠক সাকিলা পারভীন, লিডার্সের অ্যাডভোকেসি অফিসার তমালিকা মল্লিক প্রমুখ।সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগকবলিত দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের (খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাট) বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

প্রস্তাবনায় মোহন কুমার মণ্ডল বলেন, ওই এলাকার সামগ্রিক ও টেকসই উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে। স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। ওই এলাকার প্রতিটি বাড়িকে দুর্যোগ সহনশীল করে গড়ে তুলতে হবে। সুপেয় পানির স্থায়ী সমাধানে বৃষ্টির পানির সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
নদী ও জলাশয়কে অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে। সুন্দরবন সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জলবায়ু তহবিলের অর্থ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই এলাকায় বরাদ্দ দিতে হবে এবং তা ব্যবহারে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।আলোচনায় অংশ নিয়ে ধরার সদস্যসচিব শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে অঞ্চল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। এ অঞ্চল প্রকৃতিগতভাবে একটি ঐশ্বর্যপূর্ণ এবং ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তাই উপকূল ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতা ও বিজ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। বৈষম্য নিরসনের পাশাপাশি অনাচার বন্ধ করতে হবে। অন্যত্থায় আমাদের ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে।উপকূলের উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বাপার যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রসুল বলেন, এই অঞ্চলটি দীর্ঘ অবহেলার শিকার। জলবায়ু পরিবর্তন, নদীভাঙন, লবণাক্ততার বৃদ্ধি এবং পরিকল্পিত অবকাঠামোর অভাবে মারাত্মক সংকটে আছে সেখানকার জনগণ। তাই উপকূলের উন্নয়নে একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়ার পর থেকে সাগরে না যাওয়া জেলেদের জীবন-জীবিকার বিষয়ে ভাবতে হবে। এনার্জির নামে উপকূলের নদীগুলোকে ধ্বংস করায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ইলিশের ওপর নির্ভরশীল জেলেরা। তা ছাড়া নদীর ছোট নৌকা দিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জাহাজ চলাচলের কারণে মাছ ধরাই অনেকাংশে বন্ধ হয়েছে। ফলে ওই নদীর জেলেরা মালিক থেকে সাগরের মাছ ধরা জাহাজের শ্রমিকে পরিণত হচ্ছে। এসব সংকট নিরসনে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

News Link

Kaler Kantho

Daily Industry