আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভাকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে পালিত “ক্ষতি বন্ধ করো! ঋণ বাতিল করো! ক্ষতিপূরণ ও ন্যায্য রূপান্তর এখনই!” শীর্ষক বৈশ্বিক কর্মসপ্তাহের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’র উদ্যোগে বাংলাদেশেও দেশব্যাপী কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। নাগরিক সমাজ, তরুণ সংগঠন ও পরিবেশরক্ষা আন্দোলনকারীরা একযোগে ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি, জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং ন্যায্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

১৩ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত চলা এই বৈশ্বিক কর্মসপ্তাহে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার ৫০টিরও বেশি সংগঠন অংশ নেয়। তারা এক কণ্ঠে আহ্বান জানায়-ঋণ নয়, চাই ক্ষতিপূরণ; জলবায়ু সংকটের ঐতিহাসিক দায় স্বীকার করে অনুদান-ভিত্তিক অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পালিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল মোংলায় জনসমাবেশ, বরগুনা, কলাপাড়া ও পাথরঘাটাতে মানববন্ধন, কুতুবদিয়ায় নৌ মানববন্ধন, তালতলিতে পদযাত্রা, সিলেটে জলবায়ু ন্যায়বিচারের দাবিতে সাইকেল র‍্যালি এবং হবিগঞ্জে প্রতীকী নৌকা র‍্যালির মতো বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই সংহতি প্রকাশ করা হয়। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণকারীরা ঋণ ও জলবায়ু সংকটের দ্বৈত বোঝা থেকে মুক্তি, ন্যায্য রূপান্তর, এবং উপকূল ও হাওর অঞ্চলের মানুষের অধিকার রক্ষার আহ্বান জানান।

কর্মসূচীগুলোতে বক্তারা বলেন, তথাকথিত উন্নয়নের নামে ঋণ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা আসলে বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলোর অর্থনীতি ও সমাজকে শৃঙ্খলিত করছে। কঠোরতা নীতি ও বেসরকারি খাতের সুবিধাবাদী মডেল সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে নারী, শ্রমজীবী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। তারা দাবি জানান- আন্তর্জাতিক আর্থিক কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কার আনতে হবে এবং ঋণ ব্যবস্থাপনায় জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন প্রণয়ন করতে হবে।

এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর সমন্বয়কারী লিডি নাকপিল বলেন, “আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক আসলে জি–৭ গোষ্ঠীর (বিশ্বের ধনী দেশসমূহের) স্বার্থরক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে, যারা জলবায়ু সংকট ও ঋণের বিপর্যয়কে আরও তীব্র করে তুলছে। এখনই সময় এসেছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ঋণ দিয়ে সংকট সমাধানের ভান ধরা বন্ধ করতে হবে। ধনী দেশগুলোর সৃষ্ট জলবায়ু বিপর্যয়ের দায় এড়িয়ে তারা আবারও একই দেশগুলোর ওপর শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে বেসরকারিকরণ, বাণিজ্য সহজীকরণ ও নবউদারনীতির নামে মানুষের অধিকার লঙ্ঘন করছে এবং বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোর জন্য মুনাফা নিশ্চিত করছে। এটি বন্ধ করতে হবে এবং প্রকৃত ন্যায্য অর্থনৈতিক রূপান্তরের পথে এগোতে হবে।”

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় এমডিবি এবং গ্লোবাল নর্থ ঋণের দরজা খুলে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে – যে সংকট গ্লোবাল সাউথ তৈরি করেনি। এটি দক্ষিণের জনগণের চারপাশের ফাঁসি আরও শক্ত করে তোলে যারা ইতিমধ্যেই অবৈধ এবং অযোগ্য ঋণ এবং ক্রমবর্ধমান বিপর্যয়কর জলবায়ু ঘটনার বোঝার নীচে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে। তারা সক্রিয়ভাবে G7/20 এর মিথ্যা আর্থিক সমাধানগুলিকে প্রচার করে, যা আমাদের ঋণের দাসত্ব এবং জলবায়ু পতনের দিকে আরও বিপজ্জনক পথে ঠেলে দেয়। এই আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে সাহসী এবং রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ আসবে না, যা সর্বোপরি বিশ্বের ধনী দেশগুলির মালিকানাধীন এবং নিয়ন্ত্রিত, একই দেশগুলি যারা জলবায়ু কর্মের জন্য পর্যাপ্ত, অনুদান-ভিত্তিক অর্থ প্রদানের তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্বকে সম্মান করতে অস্বীকার করে।

২০২৫ সালের “এই বিশ্ব আমাদের: প্রতিরোধ করো, পুনরুদ্ধার করো, ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য জেগে ওঠো” শীর্ষক বৈশ্বিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে পালিত এই কর্মসপ্তাহ আসন্ন COP30 জলবায়ু সম্মেলন ও G20 শীর্ষ সম্মেলনকে ঘিরে বৈশ্বিক ন্যায়বিচার আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে বলে আয়োজকেরা আশা প্রকাশ করেন।

Newslinks:

Please follow and like us: